পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার 

ভূমিকা : মানুষের পরম বন্ধু হচ্ছে পরিবেশ। অন্য কথায় মানুষ পরিবেশের সন্তান। পরিবেশই মানুষকে মায়ের মমতায় সব সময় বুকে আগলে রাখে। পরিবেশের কোলেই আদিম যুগের মানুষ লালিত – পালিত হয়েছিল। মানুষ পরিবেশের  উপর এতটাই নির্ভরশীল যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান সবই পরিবেশকেন্দ্রিক। মানুষ সৃষ্টির হাজার বছর পর সভ্যতার উৎকর্ষ যখন সাধিত হয়েছিল তখন মানুষ পরিবেশকে আশ্রয় হিসেবে পরিণত করেছিল মানবসভ্যতাই। বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটিয়ে পরিবেশের উপর নির্ভরশীলতা কমালেও  মানুষ পরিবেশের ভূমিকায় পরিবেশকে একপাশে রেখে জীবনযাপন করা মানুষের  পক্ষে যেন  এক অসম্ভব ব্যাপার। অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান, চিকিৎসা, পানি, বায়ু,আলো ইত্যাদি সবই আসে পরিবেশ থেকে। মূল কথা মানুষ পরিবেশের সাহায্য ছাড়া বাঁচতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে বর্তমান মানুষ পরিবেশের উপর থেকে কিছুটা নির্ভরশীলতা কমিয়ে বেপরোয়া হয়ে গেছে। মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই দূষণের ফলে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। জীবজগৎ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের বংশবিস্তার হ্রাস পাবে ও বিলুপ্তের শিকার হবে।তাই আমাদের সবাইকে জানতে হবে কিভাবে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা যায়, পরিবেশের সাথে জীবজগতের সম্পর্ক কী,এবং কিভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তা নিয়ে নিচে আমরা আলোচনা করব। 

পরিবেশ কাকে বলে : পরিবেশ বলতে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, সবকিছুর সমষ্টিগত অবস্থাকেই বোঝায়। ইংরেজি শব্দ ‘Environment’ যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে  পরিবেশ। সামাজিক ও প্রাকৃতিক  দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মানুষ জীবন যাপনের জন্য উপযোজন প্রক্রিয়ায় যেসব জীবগত ও বস্তুগত উপায়ের উপর নির্ভর করে জীবন পরিচালনা করছে তাকেই পরিবেশ বলে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা পরিবেশ থেকে ( যেমন-ঘরবাড়ি, অফিস -আদালত, স্কুল – কলেজ, গাছপালা, নদ-নদী, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদি)  সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎস । মূলকথা পরিবেশ হচ্ছে আমরা যেখানে বাস করি তার চারপাশের দৃশ্যমান সবকিছুই। 

পরিবেশ দূষণ : মানুষের নিত্য নতুন  কর্ম কান্ডের ফলে ও নানা কারণে বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কলকারখানার বর্জ্য, নির্গত কালো ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি পরিবেশে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। বলতে গেলে এভাবেই  যেন পরিবেশের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি পরিবেশের উপাদানগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশ দূষিত  করছে। যেমন – পানি দূষণ, মাটি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ইত্যাদি। নিচে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা উল্লেখ করা হলো। 

১| পানি দূষণ :পৃথিবীতে তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগ স্থল ও দুই ভাগ পানি। পরিবেশের এক অন্যতম উপাদান হচ্ছে পানি। প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদজগতের পানি ছাড়া বেঁচে থাকা  যেন এক অসম্ভব ব্যাপার। এজন্যই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। কলকারখানার বর্জ্য পানিকে এমনভাবে দূষিত করছে তা দিন দিন যেন বিষে পরিণত  হচ্ছে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যতা।   

২| মাটি দূষণ : জনসংখ্যার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চাপ প্রলাপভাবে মাটির উপর পড়ছে।অল্প জমিতে অধিক ফসলের আশায় মাটিতে বিভিন্ন রকমের সার ব্যবহার করা হচ্ছে যেমন  রাসায়নিক সার, কীটনাশক সার ও উঁচু প্রযুক্তির ব্যবহার  যা মাটির উপরের স্তর নষ্ট করে দিচ্ছে এবং বিলুপ্ত  হচ্ছে কীটপতঙ্গ, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। 

৩| বায়ু দূষণ : পরিবেশের উপাদান গুলোর মধ্যে বায়ু অন্যতম। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল আছে বলেই মানুষ উদ্ভিদজগত ও প্রাণী বংশবিস্তার ঘটাচ্ছে। পরিবেশ মূলত দূষিত হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে লাখ লাখ ঘনফুট কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে বায়ু দূষিত হচ্ছে। যার ফলে মানুষ ও প্রাণীর ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পরিবেশের  ভারসাম্যতা নষ্ট করছে। 

৩| শব্দ দূষণ : মানুষের শ্রবণেন্দ্রিয় ডেসিবেল মাত্রা ২০ থেকে ৪০ স্বাভাবিক শব্দে স্বচ্ছন্দ ক্রিয়া করে থাকে। কিন্তু এর বেশি হলে অস্বাভাবিকতা শব্দে পরিণত হবে। বিনা কারণে যানবাহনের হর্ন,উচ্চস্বরে মাইক বাজালে, কলকারখানার নির্গত শব্দ  যা দেশের মানুষের দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক অসুস্থতা, মানসিক অস্থিরতা ও রক্তচাপে ভোগে। মোটকথা শব্দ দূষণ পরিবেশের এক অন্যতম ক্ষতিগ্রস্তের প্রভাব। 

পরিবেশ দূষণ রোধে পদক্ষেপ : পরিবেশ দূষণ বা ক্ষতি মূলত করছে বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল বিশ্ব। তাই পদক্ষেপ একা নিলে কখনোই পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য  সর্বজনীন উদ্যোগের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দরকার –

১| যে সব দেশ অতিরিক্ত কার্বন ছড়াচ্ছে তাদেরকে কার্বন ছড়ানো হ্রাসে বাধ্য করতে হবে এবং কার্বন হ্রাসকরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
২| বিশ্বব্যাপীর কাছে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।
৩| গ্রিনহাউজ গ্যাসে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে তা বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে, এর ব্যবহার কমাতে হবে।
৪| গাছপালা লাগাতে হবে এবং বনায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
৫| জমিতে রাসায়নিক স্যারের ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে হবে। দরকারে সবুজ সার ও জৈব ব্যবহার করতে হবে।
৬| বিনা কারণে গাড়ির হর্ন বাজানো, উচ্চস্বরে মাইক বাজানো,ও কলকারখানার অতিরিক্ত শব্দ বন্ধ করতে হবে।
৭| কার্বনের ব্যবহার কমিয়ে বায়ু দূষণ রোধ করতে হবে। কলকারখানার নির্গত ধোয়া রোধ করতে চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এমনকি মৃত প্রাণীর দেহ ও ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো স্থানে গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হবে যেন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বায়ু দূষণ করতে না পারে।
৮| দেশ যুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অস্ত্র ব্যবহার করা হয় তা বিরত রাখার জন্য কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৯| জনসংখ্যার বৃদ্ধি কমাতে হবে।
১০| পরিবেশের উপর ক্ষতির প্রভাব পড়তে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে  থাকতে হবে। 

উপসংহার : পরিবেশই কিন্তু মানুষের জীবন যাপনের নির্বাহের ক্ষেত্র। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।  তাই বলা যেতে পারে পরিবেশই মানুষের বন্ধু। কিন্তু মানুষের অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ফলে দূষিত হচ্ছে এই পরিবেশ এমনকি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যতা। এমনকি পরিবেশ দূষণের ফলে আবাহওয়া ও জলবায়ু স্বাভাবিক ভাব হারিয়ে ফেলছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশ দূষণের রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

 

পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার PDF Format 

পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার Audio Format 

Youtube Video

অন্যান্য রচনা
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
শ্রমের মর্যাদা
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

Facebook
Pinterest
Reddit