ভূমিকা : এক সময় বর্বর পৃথিবীর বাগানে ফুটেছিল সভ্যতার নতুন ফুল। তাও আবার বহু যুগ আগের কথা। শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে সভ্যতার প্রথম দিকে মানুষেরা সৃষ্টির উন্মাদনায় মেতে ওঠে, তারই সুফল আমরা ভোগ করছি। নিউটন, আর্কিমিডিস অথবা আইনস্টাইন, যারা সভ্যতাকে গড়ে তুলেছেন গতিময়। বিজ্ঞানের মহাবিজয় রথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এই মোবাইল ফোন।
মোবাইল ফোন কী : একটি ছোট্ট আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হচ্ছে মোবাইল ফোন। অন্য কথায় মোবাইল ফোন বলতে আমরা মুঠো ফোনকে বুঝি। মোবাইল ফোনের মধ্যে রয়েছে দুইটি ইউনিট যথা: ইনপুট ও আউটপুট, যার মাধ্যমে মুঠোফোনে তথ্য গ্রহণ ও প্রেরণের কাজ করা হয়। মোবাইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এর ডিসপ্লে যার মাধ্যমে মুঠোফোনে কোন বার্তা বা কল আসলে সেটি ডিসপ্লে তে ভেসে ওঠে। অন্যদিকে মোবাইলের সাথে থাকা ক্যামেরা দ্বারা আমারা ছবি তুলতে পারি। এমনকি মোবাইলের মাধ্যমে আমরা বিনোদন উপভোগ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারি।
মোবাইল ফোনের বিবর্তনের ধারা : ১৯৪০ সাল থেকে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হলেও এর আগে থেকে বিজ্ঞানীরা এই মোবাইল ফোন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা করতে থাকে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে নতুন নতুন প্রোগ্রাম সংযোজনের মাধ্যমে আরো আধুনিকে পরিণত করা হয়। ড. মার্টিন কুপার ও জন ফ্রিন্সস মিচেল ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন। তখন মোবাইল ফোনের ওজন ছিল প্রায় ২ কেজি। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে মোবাইল ফোনটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে প্রচার করা হয়। ধীরে ধীরে সময়ের পরিবর্তনের ফলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন আরো আধুনিকতার পরিণত হয়েছে। এখন বলতে গেলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব ধরনের কাজই সম্ভব।
মোবাইল ফোন তৈরির কোম্পানির সমূহ : বর্তমান বিশ্বের বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি মোবাইল ফোন পাওযা যায়। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্যামসাং, নকিয়া, মটোরোলা, সনি এরিকসন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এমনকি বর্তমান বাজারে চায়না মোবাইল ফোন পাওয়া য়ায়। কোনো কোনো মোবাইল ফোনের সাথে ক্যামেরা যুক্ত করা আছে। আবার কোনো কোনো মোবাইল ফোনের সাথে ক্যামেরা সহ ব্যবস্থা থাকে মেমোরি কার্ডের। যার মাধ্যমে আমরা ভিডিও, অডিও গান, ছবি সংগ্রহ করতে পারি এবং ইচ্ছামত তা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই মোবাইল ফোনগুলোর দাম একটু বেশি। অন্যদিকে চায়না মোবাইল গুলোর দাম অনেক কম। যার ফলে চায়না মোবাইল গুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। আর যারা একটু শৌখিন তারা উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর দামে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা : বিভিন্ন কাজকর্মে আমরা মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে থাকি। যেমন পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখা, জরুরী কোন বিষয়ে কাউকে খবর প্রদান করা ইত্যাদি। মোবাইল ফোন দিয়ে আমরা দূরে অবস্থানরত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। এমনকি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকি। অন্যদিকে মোবাইল ফোন বহন করাও সুবিধাজনক। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ব্যক্তি তার ফোন সব সময় কাছে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারে। এজন্য দিন দিন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারে অসুবিধা : মোবাইল ফোন ব্যবহারে যেমন সুবিধা আছে, তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ গাড়ি চলানো অবস্থায় ফোনে কথা বলে। যে কারণে তার গাড়ি চালানোর প্রতি মনোযোগ থাকে না। যার ফলে দুর্ঘটনায় স্বীকার হয়। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমনকি নিহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ( জাপান, সিঙ্গাপুর, পর্তুগাল, ইসরাইল) যানবাহন চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মোবাইল থেকে এক ধরনের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিস রেডিয়েশন বের হয় যা মানুষের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এমনকি ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মূলত মোবাইল ফোন আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য কিন্তু অন্যদিকে দেশের কিছু অসৎ ব্যক্তি আছে যারা এটাকে বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করছে।
মোবাইল ফোনের কার্যপ্রণালী : বিশ্বে একটি অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে মোবাইল ফোন। বেশিরভাগ মোবাইল ফোনের ১৬ টি বাটন থাকে। তবে কিছু কিছু মোবাইলের ১৬ টির অধিক বাটন থাকে। মোবাইল শুধু কথা বলার কাজে ব্যবহৃত হয় না। এটি বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হয়। মোবাইলে অনেকগুলো প্রোগ্রাম থাকে যেমন – Contacts, Messages, Games, Clock ইত্যাদি। Contacts অপশনের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকৃত ব্যক্তি মোবাইলে নম্বর সংরক্ষণ করতে পারে। Message যার মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকারী অন্য মোবাইল ব্যবহারকারী ব্যক্তির কাছে তার বক্তব্য লিখিত আকারে পাঠাতে পারে। Games অপশনটির মাধ্যমে মানুষ বিনোদন উপভোগ করতে পারে। অনেক মোবাইল ফোনে রেডিও ব্যবস্থা রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ খবর শুনতে পারে। তাছাড়া অনেক মোবাইলে ইন্টারনেট রয়েছে যার দ্বারা মানুষ নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
বাংলাদেশ ও মোবাইল ফোন : মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাংলাদেশে খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৯৩ সালে সিটিসেল কোম্পানি তাদের প্রথম কার্যক্রম এদেশে শুরু করে। তখনের সময়ে মোবাইল ফোন মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মত। বিশেষ করে সাধারণ মানুষগুলোর কাছে যাদের ফোন কেনার সামর্থ্য ছিল না। ১৯৯৬ সালে সরকার বাংলালিংক, গ্রামীণ এবং একটেল( যার বর্তমান নাম রবি) এই কোম্পানির গুলোকে লাইসেন্স প্রদান করে। যা বাংলাদেশের মোবাইল এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়।
বাংলালিংক কোম্পানি : ১৯৯৮ সালে বাংলালিংক কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। যার পূর্বের নাম ছিল ‘সেবা টেলিকম’। পরবর্তীতে এ কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয় বাংলালিংক। এই কোম্পানি তার গ্রাহককে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন – শর্ট মেসেজ সার্ভিস, ভয়েস মেইল সার্ভিস, কল হোল্ডিং এবং কল ওয়েটিং ইত্যাদি।
গ্রামীণফোন কোম্পানি : ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোন কোম্পানি এ দেশে তার কার্যক্রম শুরু করে। গ্রামীণফোন বাংলাদেশে বেশি অগ্রসরমান কোম্পানি। বাংলাদেশে গ্রামীণফোন কোম্পানির গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বলতে গেলে বাংলাদেশের সর্বত্র গ্রামীণফোনের গ্রাহক রয়েছে। এ কোম্পানি গ্রাহককে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে যেমন – ব্যবসায় বাণিজ্যের খবর, বৈদ্যুতিক বিল জমা, থানা, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, সংবাদপত্র ইত্যাদি অন্যান্য তথ্য প্রদান।
রবি (একটেল) কোম্পানি : ১৯৯৭ সালে এই কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। রবি কোম্পানি এদেশে ৩০ দিন মেয়াদী ৩০০ টাকার প্রি- পেইড কার্ড চালু করে। বর্তমানে এই কোম্পানির গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখের অধিক।
মোবাইল ফোনের গুরুত্ব : মানবজীবনে মোবাইল ফোনের অতি গুরুত্ব রয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করার পাশাপাশি দূর – দূরান্তে অবস্থানরত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। মোবাইল ফোন বর্তমান যুকগকে করেছে গতিময়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা বিনোদন উপভোগ করতে পারছি যেমন – গান শোনা, গেমস খেলা, ছবি তোলা ইত্যাদি। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মোবাইল ফোন ছাড়া চলা অসম্ভব। তাই মানব জীবনে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার : মোবাইল ফোন মানব জীবনের একটি বিরাট অংশ জুড়ে স্থান করে নিয়েছে। এই তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের দূর-দূরান্তে থাকা ব্যক্তিদের সাথে হাসি-কান্না সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে পারছে। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোনের অতি গুরুত্ব রয়েছে।
অন্যান্য রচনা
সময়ের মূল্য
একটি শীতের সকাল
পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ ও পরিবেশ বিশুদ্ধকরণ