তোমার প্রিয় কবি (কাজী নজরুল ইসলাম)

ভূমিকা : আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার প্রিয় কবি কে, আমি নির্দ্বিধায় বলবো–  কাজী নজরুল ইসলাম। আমি নজরুল সাহিত্যের একজন অনুরাগী পাঠক। কাজী নজরুলের অগ্নিঝরা উক্তি, যৌবন শক্তিতে ভরপুর কবিতার ছন্দ,বন্ধন অসহিষ্ণু চিত্তের প্রকাশভঙ্গি আমাকে বিমোহিত করে।

জন্ম পরিচয় ও বাল্যজীবন : ১৮৯৯ সালে ২৫ মে আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফকির আহমদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। শৈশবে বাবা মা তাঁকে আদর করে ‘দুখু মিয়া’ বলে ডাকতেন। কবি প্রথম পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তার নিজ গ্রামের মক্তবে। এখানে তিনি বাংলা আরবি ও তার পাশাপাশি ফারসি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন। 

খেয়ালী ও বেপরোয়া জীবন : শৈশবকালে নজরুল ছিলেন খুবই খেয়ালী ও বেপরোয়া। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়ম-কানুন তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। এজন্য কবির বিদ্যালয়ের প্রতি তেমন একটা মনোযোগ ছিল না। অল্প বয়সেই তিনি পড়াশোনা ছেড়ে নিজেকে যুক্ত করল লেটো গানের দলে। এরপর তিনি আসানসোলের রুটির দোকানে কাজ করেন। এরপর ত্রিশালের স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। 

ভালো লাগার কারণ : কবি নজরুলকে আমার ভালো লাগার অন্যতম কারণ– তিনি হচ্ছেন বিদ্রোহীভাবাপন্ন কবি। তার কাব্যে আমি শুনতে পাই, মৃত্যুঞ্জয়ী চির যৌবনের জয়ধ্বনি এবং আরো শুনতে পাই, অগ্নিবীণার সুর ঝংকার। তিনি বাংলা কাব্যে বয়ে এনেছিলেন দুর্বার কালবৈশাখী ঝড়। এমনকি তিনি পরাধীন জড়তাগ্রস্ত সমাজের বুকে সঞ্চারিত করেছিলেন নব যৌবনের শোণিত ধারা। তাঁর লেখা কবিতার ছন্দ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার সংগীতে বাজে সর্বহারাদের কান্নার বাণী। এজন্য কবি নজরুলকে আমার এত ভালো লাগে।  

কবির বৈশিষ্ট্য

বিদ্রোহী নজরুল : কবি নজরুলের অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য হলো– তিনি বিদ্রোহীভাবাপন্ন কবি। তার এই বিদ্রোহ সব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তিনি জীবনের সকল অন্যায় অত্যাচার ও অবিচার লক্ষ্য করেছেন এবং তার প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত। কবি বিদ্রোহী কন্ঠের বৃত্ত উচ্চারণ-

“বল বীর
বল চির উন্নত মম শির
শির নেহারী আমারি নত শির
ওই শিখর হিমাদ্রির।”

প্রেম ও সৌন্দর্যের পূজারী নজরুল : নজরুল হলো প্রেম ও সৌন্দর্যের পূজারী। তিনি শুধু বিদ্রোহের কথাই বলেননি, প্রেমের কথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন। প্রেমিক নজরুলকে খুঁজে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত বিদ্রোহী কবিতায় “আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাকন চুড়ির কনকন।”এই প্রেমের কবিতাগুলো নজরুলকে সমসাময়িকতার ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছে। 

নজরুল কবিতার অন্যান্য দিক : নজরুল হলো মানবতার ও সাম্যের কবি। তার কাব্যে তিনি নিপীড়িত, শোষিত, লাঞ্ছিত জীবনের জয়গান গেয়েছেন। কবির সর্বহারা কাব্যের কবিতাগুলোতে ফুটে উঠেছে গণমানুষের দুঃখ দুর্দশার ছবি। সাম্যবাদী কবিতায় কবি মিশে গেছেন জনগণের সাথে। তিনি বলেন —

“গাহি সাম্যের গান–
সেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাঁধা-ব্যবধান।”

নজরুলের উপন্যাস / ছোট-গল্প / প্রবন্ধ : কবি নজরুলের উপন্যাস ‘বাঁধন হারা’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘ব্যথার দান’, ‘কুহেলিকা’, ‘রিক্তের বেদন’ সব্যসাচী সাহিত্যিক হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। অপরদিকে তাঁর ছোটগল্প ‘জিনের বাদশা’ ‘শিউলি মালা’র মত অনেক ছোট গল্প ছোটগল্পকার হিসেবে তিনি পেয়েছেন অমরত্ব। 

নজরুলের গান : কবি নজরুল ছিলেন গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। তিনি বাংলা সংগীত ভুবনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঝড়ের মত। এমনকি তিনি অসংখ্য গানের পাশাপাশি রচনা করেছেন অনেক ইসলামিক গজল ও শ্যামাসংগীত ; সেখানে আমরা খুঁজে পেয়েছি ইসলামী ঐতিহ্য ও হিন্দু পুরাণের বিচিত্র সমাহার। এমনটি বাংলার অন্য কোন কবি, সাহিত্যিক বা গীতিকার এর মধ্যে পাওয়া যাই নাই। 

উপসংহার : দুই বাংলার সমগ্র বাঙালির প্রিয় কবি হলো নজরুল। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃষ্টিকর্তার এক আশীর্বাদ। বাংলা সাহিত্যকে তিনি নতুন রসের ধারায় সঞ্জীবিত করে তুলেছেন। এই সমস্ত বহুমুখী গুনের অপূর্ব সমাবেশের কারণেই তিনি আমার প্রিয় কবি।

প্রিয় কবি (কাজী নজরুল ইসলাম) PDF Format 

 

অন্যান্য রচনা 
খাদ্য ভেজাল ও মুনাফালোভীদের দৌরাত্ম্য
শহীদ তিতুমীর
বই পড়ার আনন্দ

Facebook
Pinterest
Reddit