Jono sonkha somossa wikipedia, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও ফলাফল, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার, জনসংখ্যা সমস্যা কি class 5, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুফল ও কুফল, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের ৫ টি উপায়, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণ ও ফলাফল, জনসংখ্যা কাকে বলে, Overpopulation,

জনসংখ্যা সমস্যা

অথবা, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার 

ভূমিকা : জনসংখ্যা একটি দেশ ও জাতির মহামূল্যবান সম্পদ। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের কারণে জনসংখ্যা একটি দক্ষ শক্তিতে পরিণত হয়। যখন কোন দেশের জনসংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত হয়, তথা জনগণের দ্বারা যদি জনগণের কল্যাণ না হয়, দেশের উন্নতি ব্যাহত হয় তখন সংখ্যা শক্তির পরিবর্তে সমস্যায় পরিণত হয়। বর্তমান বাংলাদেশে প্রধান জাতীয় সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। কারণ আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে আমাদের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান : বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আয়তন ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। আদমশুমারি ২০২২ অনুসারে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭কোটি। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৯ জন বাস করে।

জনসংখ্যা মারাত্মক কেন : জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই তা যে সমস্যার সৃষ্টি করবে এমনটা বলা যায় না। অনেক সময় বাড়তি জনসংখ্যা সম্পদে পরিণত হয়। যেমন : চীনের জনসংখ্যা ১৫০ কোটি। সেখানে জনসংখ্যা তেমন একটা সমস্যা নয়। কারণ তাদের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি নয়। এছাড়া তাদের রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ও জীবিকার সুযোগ-সুবিধা। খাদ্যশস্যের নেই কোন ঘাটতি। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। মূলত অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত নিচের সমস্যা গুলার সম্মুখীন হচ্ছে: 

ক) খাদ্য ঘাটতি : বেঁচে থাকার জন্য মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ হলো কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের মানুষের খাদ্যের মূল উৎস হলো কৃষি। কিন্তু আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ জনসংখ্যার তুলনায় কম। জনসংখ্যা কৃষির উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য আমাদেরকে বিদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৫/২০ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। 

খ) পুষ্টিহীনতা : খাদ্যের মানের উপর নির্ভর করে পুষ্টি। আমাদের দেশে শতকরা ৮৫ জন অপুষ্টিতে ভুগছে। পুষ্টিহীন জনশক্তি দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখতে পারে না বরং দেশের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। 

গ) স্বাস্থ্যহীনতা ও চিকিৎসা : জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে সকল মানুষের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে প্রতি ৫,০০০ জন লোকের বিপরীতে একটি মাত্র শয্যা বিদ্যমান। আর ১,০০০ লোকের জন্য একজন মাত্র ডাক্তার রয়েছে। 

ঘ) পরিবেশ দূষণ : বিপুল জনসংখ্যার মল-মূত্র বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা দেশে যোগান দেওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।   

ঙ) দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ে এবং সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম বাড়ে। পরিবারের সীমিত আয়ের উপর বর্ধিত নতুন মুখের খাওয়া-পরা স্বাস্থ্য রক্ষা ইত্যাদি বহনে চাপ পড়ে। এভাবে পারিবারিক দুরবস্থা থেকে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়। 

চ) শিক্ষাহীনতা : বিপুল জনসংখ্যার ফলে স্কুল-কলেজের বইপত্র ও শিক্ষকের যোগান দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলও শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে না। 

ছ) ভৌগলিক পরিবেশ : নদীমাতৃক পলি সমৃদ্ধ সমভূমি এবং উষ্ণ মৌসুমি জলবায়ু জন্মহার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এদেশের নারী পুরুষ অল্প বয়সেই যৌবনপ্রাপ্ত হয় যা অধিক সন্তান উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে। 

জ)  ব্যাপক দরিদ্রতা : জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহীনতা, খাদ্যাের স্বল্পতা কোনোটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রত্যেকটির কারণ দরিদ্রতা। 

ঝ) সামাজিক কুসংস্কার : অশিক্ষিত জনগণ উন্নত জীবন যাপনের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। সামাজিক কুসংস্কার তাদেরকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে অশিক্ষিত জনগনের মাঝে প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে মুখ দিয়েছেন তিনি, আহার দিবেন তিনি।   

ঞ) বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ : গ্রাম অঞ্চলে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রচলিত আছে। বাল্যবিবাহের কারণে অধিক যৌন মিলনের ফলে বেশি সন্তানের জন্ম হয়। তাছাড়া এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা বহুবিবাহ করে এবং বহু সন্তানের জনক হয়। 

ট) পুত্র সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা : পুত্র সন্তানকে বৃদ্ধ বয়সের বীমা হিসেবে ধরা হয়। তাই কন্যা সন্তান জন্মালে অধিক পুত্র সন্তানের আশায় অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

জনসংখ্যা সমস্যা প্রতিকারের উপায় : জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। আমাদের একার দ্বারা এই সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে এ সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করছে। এখনই যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তবে, ভবিষ্যতে এটা মারাত্মক রূপে আবির্ভূত হবে। এর জন্য ব্যাপক ও বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নিচে কতকগুলো প্রতিকারের উপায় তুলে ধরা হলো–

১। শিক্ষাবিস্তার : একমাত্র শিক্ষিত জনগণ বুঝতে পারে অধিক জনসংখ্যার কুফল। তাই ব্যাপকহারে শিক্ষা বিস্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স্ক শিক্ষা, গণশিক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি সংস্কার মুক্ত করে তুলতে হবে। 

২। ব্যাপক দরিদ্রতা কমানো : ব্যাপক দরিদ্রতার ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দরিদ্রতা কমাতে পারলে জনসংখ্যা ও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। 

৩। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ : বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহের কারণে জনসংখ্যা বাড়ছে। যদি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ কমিয়ে আনা যায় তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হবে। 

৪। নারী-পুরুষের সচেতনতা : জনসংখ্যা হ্রাস করার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেককে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে বিভিন্ন সংস্থার সাথে জড়িত করতে হবে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুফল ও কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে। 

৫। পরিবার পরিকল্পনা : অল্প বয়সে অধিক সন্তান গ্রহণ উচিত নয়। ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক একটি সন্তানই যথেষ্ট এই শিক্ষা ও কর্মসূচিকে প্রচার জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। 

উপসংহার : জনসংখ্যা সমস্যা আমাদের প্রধান সমস্যা এবং জাতীয় উন্নতির প্রধান প্রতিবন্ধক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে দেশ ও জাতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে শিক্ষিত যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচারকর্ম চালানো হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা শুধু সরকারি উদ্যোগেই রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাই আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসবে।

জনসংখ্যা সমস্যা PDF Format

 

অন্যান্য রচনা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪
একুশে ফেব্রুয়ারি

বাংলাদেশের ষড়ঋতু

Facebook
Pinterest
Reddit