অথবা, বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন
অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব
অথবা, দৈনন্দিন / প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান
অথবা, মানব জীবনে বিজ্ঞানের অবদান
অথবা, বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা
ভূমিকা : বিজ্ঞানের যুগ বলতে বোঝায় আধুনিক যুগকে। মানব সভ্যতায় বিজ্ঞানের গুরুত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানের অবদান মানব কল্যাণে অপরিসীম। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সুখ ও শান্তি এসেছে বিজ্ঞান আবিষ্কারের ফলে এমনকি বিভিন্ন কাজের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান যুগে মানব সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল কারন হচ্ছে বিজ্ঞানের দান।
বিজ্ঞান কী : বস্তুজগৎ এবং জীবজগৎ সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান। অন্যকথায় বলা যেতে পারে বিজ্ঞান হলো সংঘবদ্ধ জ্ঞানের সমষ্টি। যদি কোনো বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা যায় আসলে তার নামে হচ্ছে বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের গুরুত্ব : বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র বিজ্ঞানের জয়যাত্রা রয়েছে। পৃথিবীতে বিজ্ঞান ছাড়া চলা যেন এক অসম্ভব ব্যাপার। মানব সমাজে যে দিকেই দৃষ্টিপাত হয় না কেন সবকিছুতে বিজ্ঞানের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান জয় করছে মৃত্যুকে। বিজ্ঞান এক দেশের খবর অন্য দেশে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সকল দূরত্ব কমিয়ে পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। এমনকি বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে দিচ্ছে। মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে এই বিজ্ঞানকে। বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক জীবনযাত্রার সুখ – সমৃদ্ধি গড়ে তোলা। তাই আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অতি গুরুত্ব রয়েছে। চিকিৎসায় বিজ্ঞান ব্যবহারের ফলে মানুষ অকাল মৃত্যু থেকে রেহাই পাচ্ছে। কলেরা, যক্ষা এই ধরনের রোগে ভুক্তভোগী মানুষ অসময়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে না। উন্নতমানের ঔষধ এক্সরে বিভিন্ন চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে এক অমূল্য পরিবর্তন।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : বর্তমানে বিজ্ঞান কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে। কৃষকরা কৃষি কাজে বিজ্ঞান ব্যবহার করে উন্নত সাধন করছে। প্রাচীনকালে জমিতে লাঙ্গল ব্যবহার করা হতো কিন্তু কৃষকরা তা এখন উপেক্ষা করে ব্যবহার করছে উন্নত মানের লাঙ্গল ও ট্রাক। জমিতে আগে পচা আবর্জনা ব্যবহার করা হতো কিন্তু এখন তার সমাপ্তি ঘটিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক সার। জমিতে এখন পানি সেচের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অগভীর নলকূপ, প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না কোন কৃষকের। গবেষণার ফলে সরবরাহ করা হচ্ছে উন্নত মানের বীজ।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : আধুনিক বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে রয়েছে। বিজ্ঞান কে শিক্ষাক্ষেত্র থেকেও বাদ দেওয়া হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান তৈরি করে দিচ্ছে কাগজ ও মুদ্রণযন্ত্র। ইন্টারনেটে শিক্ষাক্ষেত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। এমনকি জ্ঞানের আদান প্রদান খুব সহজ ভাবে পরিণত হয়েছে। চাইলেই আমরা খুব সহজে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি। এগুলোর মাধ্যমে আমরা ঘরে বসে উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে পারছি। প্রশ্ন তৈরি, উত্তরপত্র, পরীক্ষা গ্রহণ ইত্যাদিতে বিজ্ঞানের গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান অপরিসীম।
খাদ্যে বিজ্ঞান : মানুষের মৌলিক চাহিদা হচ্ছে ছয়টি তার মধ্যে খাদ্য হচ্ছে প্রধান। খাদ্য ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারেনা। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্যের। এই দিকটা বিবেচনা করে বিজ্ঞান মানুষের জন্য খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এমনকি সে চেষ্টা স্বার্থকে পরিণত হচ্ছে। ধান, গম বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন প্রকারের বীজ তৈরি করছে এই বিজ্ঞান।
যোগাযোগ – ব্যবস্থায় বিজ্ঞান : যোগাযোগের মূল মাধ্যমে হচ্ছে বিজ্ঞান। মানুষের পদচারণ এখন সব জায়গায় যেমন – ট্রেন, বাস, জলপথে জাহাজ, আকাশ পথে দ্রুতগামী বিমান যা আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ হয়েছে। মানুষ এখন মুহূর্তেই মোবাইলের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশের যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব সহজ করে দিয়েছে এই বিজ্ঞান। এমনকি মানুষ বিভিন্ন গ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে রকেট আবিষ্কারের ফলে। মূলত এসব কিছু সম্ভব হয়েছে একমাত্র বিজ্ঞানের কল্যাণে।
তথ্যপ্রবাহে বিজ্ঞান : তথ্য সংগ্রহ করার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে এই বিজ্ঞান। বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্যবিপ্লবের যুগ। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইমেইল, ফ্যাক্স পৃথিবীতে এরা যেন এক সূত্রে বাধা। কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যের সমস্যার সমাধান নির্ভুল ভাবে করা যাচ্ছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমানে সারাদেশে মানুষের হাতের মুঠে পৌঁছে গেছে।
বিনোদনে বিজ্ঞান : মানুষকে বিনোদন উপভোগ করার জন্য বিজ্ঞান বিভিন্ন প্রকার উপকরণ আবিষ্কার করেছে। যেমন টেলিভিশন, ডিভিডি, ক্যামেরা, চলচ্চিত্র, স্যাটেলাইট চ্যানেল ইত্যাদি। বলা যেতে পারে মানুষের জীবনসঙ্গী হিসাবে বিজ্ঞান পরিচিত। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিনেমা সিনেমা, গান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি যার মাধ্যমে মানুষ সময় কাটাতে পারছে।
বিজ্ঞানে অকল্যাণ : একদিকে বিজ্ঞান যেমন মানুষের উপকার সাধন করছে অন্যদিকে এনেছে অকল্যাণ। বিভিন্ন প্রকারের বোমা আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতা আজ মারাত্মক ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সাবমেরিন, বোমারু বিমান, ডিনামাইট আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদের বিপরীতে অভিশাপে পরিণত করেছে।
উপসংহার : মানব সভ্যতাকে আধুনিকতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এই বিজ্ঞান। মূল কথা বিজ্ঞান আমাদের সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়ন করেছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন করে তুলেছে দ্রুতগামী। তবে অন্য কথায় মানুষ যদি বিজ্ঞানকে অপব্যবহার করে তার দোষ মূলত মানুষই, দোষ বিজ্ঞানের নয়। তাই সকলের উচিত বিজ্ঞানকে ভালো কাজে ব্যবহার করে আশীর্বাদি হওয়া।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা PDF Format
অন্যান্য রচনা
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
শ্রমের মর্যাদা
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার