ভূমিকা : সফলতা অর্জনের জন্য চাই সাধনা আর সাধনার জন্য চাই নিষ্ঠা একাগ্রতা। খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিরা সকলেই অধ্যবসায়ের দ্বারা নাম ডাকের সাড়া পেয়েছেন। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের মতে ‘Our life is full of struggle’ জীবনে সফলতা লাভের মূল মাধ্যম হচ্ছে অধ্যবসায় । মূলত এটাই মানুষের মহৎ গুণ। অধ্যবসায় হতে না পারলে জীবন মরীচিকার মতোই থেকে যায়। তাই ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন –
“কোন কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।”
অধ্যবসায় কী : অধ্যবসায় হচ্ছে কোন কাজের প্রতি অতি সাধনা গভীর মনোযোগ ও প্রচেষ্টা। কাজের ব্যর্থতাকে ভুলে গিয়ে বার বার সাফল্যে লাভের প্রচেষ্টা মূলত অধ্যবসায়। ধৈর্য সহকারে অতি পরিশ্রমের নামে হচ্ছে অধ্যবসায়। ডঃ লুৎফর রহমান বলেছিলেন – কোনো সাধনা প্রথমে যদি তা ব্যর্থ রূপ ধারণ করে, তবে তড়িৎ যেওনা বারে বারে আঘাত করো, দুয়ার ভেঙে যাবে।’ Try again and again. একেই বলে অধ্যবসায়।
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা : মানব জীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব অপরিসীম। এই অধ্যবসায় ছাড়া জগতে কেউ কখনো সফলতা অর্জন করতে পারেননি। পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর এবং মহৎ বা কল্যাণকর সবই অধ্যবসায়ের দ্বারা অর্জিত। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা বাধা বিপত্তি আসতে পারে এই সকল বাধা বিপত্তিকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই জীবনের উন্নতি সাধন হবে। একবার ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতা নিজের মাঝে পুষে না রেখে বারবার চেষ্টা মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে হবে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই কিন্তু মানুষ অসাধ্যকে সাধন করেছে। যেমন বলি বিখ্যাত দার্শনিক, সেনানায়ক, ধর্ম প্রচারক, বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক সকলেই অধ্যবসয়ের মাধ্যমে সফলতা লাভ করেছে।
মানব সভ্যতার অধ্যবসায় : অধ্যবসায় অতি গুরুত্ব রয়েছে মানব সভ্যতার। আজকের এই সভ্য জগৎ মূলত সাধন হয়েছে পূর্বপুরুষদের অধ্যবসায়ের ফলে। একসময় মানুষ ছিল জন্তুর মতো। ছিলনা কোন ভাষা, ছিলনা কোন পরিবার, কিংবা কোন রাষ্ট্র, বলতে গেলে সমাজে কোন কিছুই ছিল না। বর্তমান জগৎ পরিবর্তিত হয়েছে কঠোর পরিশ্রম, প্রচেষ্টা সাধনা ও অধ্যবসায়ের গুণে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : Basically, student are the future of the country and the nation’. মূলত ছাত্ররাই দেশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ। অবশ্য যে ছাত্রজীবনে পরিশ্রম করে না সে কখনোই তার ভবিষ্যতের উন্নতি সাধন করতে পারবে না। অর্থাৎ ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি জীবনই হচ্ছে অধ্যবসয়ের জীবন।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় : ছাত্র জীবনে এবং ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়েরও প্রয়োজন রয়েছে। অধ্যবসায় ছাড়া ছাত্র জীবন এবং জাতীয় জীবনে সাফল্য পরিপূর্ণ করা অসম্ভব। একটি জাতির গৌরব প্রতিষ্ঠাতা লাভের জন্য সকল নাগরিকের প্রয়োজন অধ্যবসায়। জাতির উন্নতি লাভ ও জাতিকে স্বর্ণ শিখরে আহরণ করে এই অধ্যবসায়। যা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করার পরিচিতি লাভ করে।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা : অনেকের ধারণা প্রতিভাই সফলতা অর্জনের একমাত্র কারণ। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল কারণ অধ্যবসায় না থাকলে শুধু প্রতিভা দিয়ে কিছুই হয় না। শুধু অধ্যবসায় থাকলে প্রতিভার অধিকারী না থাকলেও বড় কাজ সাধন করা যায়। অন্যদিকে আবার অধ্যবসায়ের সাথে প্রতিভা যুক্ত হলে বড় কিছু অর্জন করা যাই। বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছিলেন, “প্রতিভা বলতে কিছুই নেই। কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রাখো , তবেই তুমি প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।”
অধ্যবসয়ের মূল্য : মানব জীবনে অধ্যবসায়ের মূল্য অপরিসীম। দুঃখবাদী এবং দুঃখে আমাদের জীবনগড়া এমনকি অনেকেই দুঃখের সাথে পাঞ্জা লড়ে। মানুষ অধ্যবসায় ছাড়া বিশ্বের উন্নতি লাভ করতে পারত না। মূল কথা সাফল্য লাভের মূল মন্ত্র হচ্ছে এই অধ্যবসায়।
ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অতুলনীয়। সকল মানুষের শক্তি একরকম নয়। কিন্তু সবাইকে জীবনে উন্নতি করতে সন্ধান করতে হয়। অধ্যবসায়কে যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় তবেই শক্তির স্বল্পতা সাফল্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় : জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বের ভূমিকা রয়েছে। যে জাতি অধ্যবসায়ী সে জাতি অবশ্যই মর্যাদার শীর্ষে স্থান অর্জন করে। যেমন বলি – জাপান হচ্ছে সবচেয়ে পৃথিবীর একটি উন্নত দেশ, মূলত দেশটি এই উন্নত লাভ করেছে অধ্যবসায়ের কারণে। যে জাতি যত বেশি উন্নতি সে জাতি তত বেশি অধ্যবসায়ী। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে অধ্যবসায়ের ফসল।
অধ্যবসায়হীন ব্যক্তির পরিণাম : যে ব্যক্তির জীবনে কোন অধ্যবসায় নেই, সে ব্যর্থতার শিকার। প্রথমদিকে যেকোনো কাজই কঠিন মনে হয় কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজে যদি দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কাজে অগ্রসর হওয়া যায় তাহলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হয়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি কখনোই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। পরিশেষে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। একমাত্র অধ্যবসায় গ্রহণে মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে।
অধ্যবসায় ব্যক্তির সম্মান : সকল জাতির সম্পদ হচ্ছে অধ্যবসায়ী ব্যক্তি। অধ্যবসায় ব্যক্তিদের জাতি চিরস্মরণীয় ও শ্রদ্ধাভরে রেখেছে যুগের পর যুগ। যেমন : শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হক, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ও জগদীশচন্দ্র বসু।
অধ্যবসায় জীবনের চিরায়ত সংগ্রামী শক্তি : জীবনকে অতি সংগ্রামে পরিণত করা হচ্ছে কোন কাজে অধ্যবসায়ী হওয়া। জীবনের প্রতিটি কর্মে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব রয়েছে। এই সংগ্রামের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের পথরেখা সামনে হাজির হয়।
ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি : জীবনের সফলতার পাশাপাশি রয়েছে ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতাই হলো সফলতা অর্জনের সেপান। কোন কাজে ব্যর্থ হলে অধৈর্য হলে চলবে না, ধৈর্যের সহকারে সে কাজকে সম্পূর্ণ করতে হবে। তবেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
সাধারণ মানুষের জীবনে অধ্যবসায় : সকল ব্যক্তি জন্মগ্রহণের সময় সাধারণভাবে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু এই কর্মময় পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে অধ্যবসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই প্রতিটি সাধারণ মানুষকে অধ্যবসায়ী হতে হবে।
অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত : সার্থকতা কিংবা সাফল্য অর্জন করেছে ওই সকল ব্যক্তিরা যারা অতি ধৈর্যশীল এবং অধ্যবসায়ী। অধ্যবসায়ী ব্যক্তিরা হাজারো বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। বলতে গেলে তারা ত্যাগে এবং ধৈর্যে অন্যতম। যেমন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্প সাহিত্য ম্যাক্সিম গোর্কি সকলে অধ্যবসায়ী ছিলেন। বিজ্ঞান ক্ষেত্রেও নিউটন, মাদামকুরি, আইনস্টাইন ও গ্যালিলি জীবনের অধ্যবসায় অর্জন করেছেন।
উপসংহার : জীবনে সকলকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী। জীবনে যখন ব্যর্থতা দুঃখ বিপদ এসে উঁকি মারে তখনই অধ্যবসায়ী মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করতে হবে পাশাপাশি তাদের আদর্শ এবং নীতিকে অনুসরণ করতে হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী ব্যক্তিদের সব সময় সাহায্য করেন।
অন্যান্য রচনা
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
শ্রমের মর্যাদা
পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার