ফ্রি লেকচারশিট এবং ফ্রি রিসোর্স

৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১২শ শ্রেণি

ফ্রি কোর্সসমূহ

৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১২শ শ্রেণি

আমার প্রিয় লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা | Tomar Priyo Lekhok Essay in Bengali

তোমার প্রিয় লেখক 

অথবা, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় 

ভূমিকা : আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক আপার বিস্ময়। এক জ্বলন্ত ধূমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব, গতানুগতিক জীবনদর্শন, সমাজদর্শন ও সাহিত্যদর্শনকে তছনছ করে অকালে এ জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার প্রতিভার দীপ্তিতে সমসাময়িককাল বিস্মিত, সাহিত্য-সমালোচকরা বিমূঢ়, বাংলা সাহিত্যের পাঠকরা আবির্ভূত। 

ভৌগোলিক ব্যাপ্তি ও নবতর দৃষ্টিভঙ্গি : বাংলা সাহিত্যে তখন কল্লোল যুগ। ‘কল্লোল’ পত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে গড়ে ওঠে এক প্রবল সাহিত্য আন্দোলন। সেই সময় প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামে যে মানুষটি ‘কালো মানিক’র মতো বাংলার শাশ্বত সমাজে অবতীর্ণ হলেন, তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বাংলা সাহিত্যে রাখলেন তার প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর। পূর্ববঙ্গের সাধারণ জন-মানবের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয়। বিদগ্ধ শিল্পীর মতো তিনি তাদের বিচিত্র জীবনালেখ্য এঁকেছেন। বাংলা সাহিত্যের ভূগোলিক বিস্তৃতিতেই নয়, রচনা ঐতিহ্য ও পূর্বসংস্থানের বিরুদ্ধে মৌলিক বিদ্রোহ ঘোষণায় তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাস্তবতাবোধ : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হলো বিজ্ঞানের ছাত্র। একদিন তিনি সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে ‘অতসী মামী’ গল্পটি লিখে বাংলার পাঠক, সাহিত্যিক ও সমালোচকগণকে অবাক করে দেন। তারপর থেকে তার সৃষ্টির দুয়ার খুলে যায়। ঝড়ের বেগে এলো ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’ও ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের সূচনা হলো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাস্তবতা সাধারণ বাস্তবতার মতো নয়, প্রচলিত বস্তু-চিত্র নয়, তার বাস্তবতা শিল্পীর তৃতীয় নয়নে উদ্ভাসিত এক চরম বস্তুসত্তা। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিসম্ভার : তিনি সমাজকে দেখেছেন প্রকৃত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এবং তাকে রূপদান করেছেন যথার্থ প্রথম শ্রেণীর শিল্পীর তুলিতে। কিন্তু একই সঙ্গে জীবনের প্রতি তীব্র আসক্তি ও সুদূর নিরাসক্তির এমন দুর্লভ সমন্বয় অন্য কোনো শিল্পীর শিল্পী-সাধনায় পরিলক্ষিত হয়নি। ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘জননী, অহিংসা’, ‘অমৃতস্য পুত্রা’, ‘শহরতলী, ‘প্রতিবিম্ব’, ‘প্রাণেরস্বরের’ উপাখ্যান-  উপন্যাসে এবং ‘অতসী মামী’, ‘সরীসৃপ’, ‘বৌ’, ‘মিহি ও মোটা কাহিনী’, ‘ভেজাল’  ইত্যাদি ছোটগল্পে তাঁর জীবন-দর্শন, সমাজ-দর্শন ও শিল্প-দর্শন একাকার হয়ে গেছে। 

উপন্যাস : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ এ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে তার জীবন-দর্শন ও সাহিত্য-দর্শনের প্রথম প্রতিশ্রুতি। এ উপন্যাসে আনন্দের চন্দ্রকলা নৃত্য এবং প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে তার আত্মসমর্পণ অনবদ্য শিল্পোৎকর্ষের চরমতম নিদর্শনরূপে বাংলা সাহিত্যে চিরোস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। হোসেন মিয়ার বলিষ্ঠ উদারতা ‘পদ্মানদীর মাঝি’র প্রধান আকর্ষণ। আর জীবনযুদ্ধে পর্যুদস্ত নৈরাশ্যক্লিষ্ট অসহায় নর-নারীর সামনে হোসেন মিয়ার আবিষ্কার ময়নাদ্বীপটি যেন তাদের আশা আকাঙ্ক্ষারই নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অপরদিকে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এর উপন্যাসে প্রতি পদক্ষেপই যেন নর-নারী চরিত্রের নব নব পরিচয়। শশী গোপাল, বিন্দু, কুসুম, কুমুদ, মতি প্রত্যেকটি  চরিত্র বাংলা সাহিত্যে নতুন এবং জীবন্ত। সর্বোপরি, সৃষ্টির অন্তর্ভেদী অনন্যতা এবং গভীর বিশ্লেষণাত্মক লেখকভঙ্গি উপন্যাসটির অনুকরণীয় বৈশিষ্ট্য। ‘জননী’ উপন্যাস যেন সংসার-সম্রাজ্যের এক নির্মম ভাঙ্গাগড়ার কাহিনী। ‘শহরতলী’ উপন্যাসে লেখক গ্রহণ করেছেন সংগ্রামী শ্রমিক সমাজের প্রেক্ষাপট। 

উপসংহার : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাসে মনস্তত্ত্বই হয়েছে কাহিনী ও চরিত্রসমূহের অমোঘ ও দুর্জয় শক্তি। বাংলা সাহিত্যে নব নব সৃষ্টির দ্বারোদঘাটন করে তিনি অকালেই পৃথিবী থেকে তার গল্প উপন্যাসের নায়কের মতো অকালপ্রস্থান করেছেন। কিন্তু পেছনে যে অনবদ্য সৃষ্টিসম্ভার রেখে গেছেন, তাতে বাংলা সাহিত্য প্রান্তর সমৃদ্ধির সাফল্যে হয়ে উঠেছে শস্যপূর্ণ।

Priyo Lekhok Rochona PDF
তোমার প্রিয় লেখক রচনা PDF

অন্যান্য রচনা
শিক্ষাসফরের গুরুত্ব
নারীশিক্ষা
বিজয় দিবস