ভূমিকা : বাংলাদেশের বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা এমন পরিস্থিতিতে রূপ ধারণ করেছে যে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ জন লোক মারা যাচ্ছে। আবার এমন এমন সময় আছে যে একসাথে অনেক লোক মারা যাচ্ছে। ইছাপুর যেটা অবস্থিত টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে, ১৯৯৮ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৭৯ জন যাত্রীর মৃত্যু ঘটেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই বৃহত্তম সড়ক দুর্ঘটনা।
লোকসংখ্যা ও যানবাহন বনাম রাস্তা : বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরেই সড়ক পথের বেশ উন্নতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে পাকা রাস্তার পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার মধ্যে ৪০% হচ্ছে হাইওয়ে। অন্যদিকে চার লক্ষ হচ্ছে মোটরযানের সংখ্যা। অটোরিকশা, ভ্যান, সাধারণ রিক্সা, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি। মূলত বাংলাদেশে অতিরিক্ত যানবহন চলাচলের ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ : বর্তমান বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের দেশে এক জাতীয় সমস্যা। নানা ধরনের উপায়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাজা প্রাণ যেন অকালে ঝড়ে পড়ছে। মূলত চার ভাগের তিন ভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে অযোগ্য এবং লাইসেন্সবিহীন যানবহন চালকের কারণে। যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা না ভেবে প্রায়ই গাড়ি চালক মাদকে আসক্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা তো ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে লোকের জীবনের যবোনিকা বয়ে আনছে। সড়ক দুর্ঘটনার আর একটা মূল কারণ হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণভাবে যানবাহন চালানো। চালক ট্রাফিকের আইন ভঙ্গ করছে এমনকি ওভারটেকিং এর ভূত যেন চালকদের ঘাড়ে বিদ্যমান থাকে। যার ফলে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হচ্ছে এই ওভারটেকিং এর ফলে। যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন পাশাপাশি মালামাল বহন এবং হরতাল পথ শোভা কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এ কারণে চালকদের যানবহন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পরে। এসব পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সড়ক দুর্ঘটনা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবের পাশাপাশি আরো নানা ধরনের কারণ রয়েছে।
দুর্ঘটনার চিত্র : সড়ক দুর্ঘটনা যেন বর্তমানে দেশে এমনভাবে ফুটে উঠেছে এ যেন এক নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন দেশে কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার ফলে ছিনিয়ে নিচ্ছে মানুষের তাজা প্রাণ। এমনকি ধ্বংস হচ্ছে মানুষের সংসার জীবন, হাজারও মায়ের কোল খালি হচ্ছে। কোথাও বাসে বা ট্রাকে, রিক্সার সাথে প্রাইভেটকারের আবার ট্রাকে বা টেম্পুতে, বাসে বা বাসের মিলিত সংঘর্ষের পাশাপাশি দ্রুতগামী বাস বা ট্রাকে চাপা পড়ে ঝরে পড়ছে অমূল্য মানব জীবন।
ঢাকার চিত্র : ঢাকায় প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক নিয়মিত রুটিন। মানুষের তুলনায় এখানে রাস্তা বা রাস্তার বাহক,এমনকি যানবহনের মাত্রা অতিরিক্ত, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্ঘটনা এর পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা।
ঢাকার বাইরে : ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরের দুর্ঘটনার বৃদ্ধির হার কিছুটা কম। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক মূলত দূর্ঘটনার শিকার হয়। এ বাহন গুলো ফেরিতে অবস্থানের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, অথবা গাছে ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি অন্য যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে হাজার ও বধুকে সাজাচ্ছে বিধবা রূপে, অন্যদিকে কেউ হচ্ছে এতিম, আবার কেউ হচ্ছে সহায় সম্বলহীন।
দূর্ঘটনার সার্বিক মূল্যায়ন ও প্রতিকার : বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি এমন রূপ ধারণ করেছে যে সকালে সুস্থ অবস্থায় ঘর ত্যাগ করা মানুষটি সন্ধ্যায় যেন লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। আমাদের ভাবতে হবে এর প্রতিকার ব্যবস্থা –
১| লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা;
২| লক্ষ্য রাখতে হবে যে লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালক যাতে কোনভাবে গাড়ি চালাতে না পারে;
৩| পথচারীদের কে আইনের আওতার পাশাপাশি ট্রাফিক আইন যথাযথ মেনে চলতে হবে;
৪| গাড়ি রাস্তায় বের করার পূর্বে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত কিনা ;
৫| মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখতে হবে এবং পরিবহনের মালিকদের সৎ ও ভদ্র চালক গ্রহণ করতে হবে;
৬| বড় শহরগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
উপসংহার : প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। জন্মিলে অবশ্যই মরতে হবে এ কথা সত্য তবে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সকলেই চাই। সড়ক দুর্ঘটনায় কারো জীবন যেন অকালে ঝড়ে না পরে, এমনকি কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয় সেজন্য, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই সকলের দাবি “নিরাপদ সড়ক চাই”।
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার PDF Format
অন্যান্য রচনা
জীবন গঠন ও চরিত্র
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
শ্রমের মর্যাদা
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা