বন্যা ও প্রতিকার, bonna rochona bangla, রচনা ২০ পয়েন্ট, বন্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন, বাংলাদেশে বন্যার কারণ, বন্যা মোকাবেলায় করণীয়, বন্যা কেন হয়, বন্যা মোকাবেলায় করণীয়, বন্যা প্রতিরোধের ৫টি উপায়, বন্যা প্রতিরোধের চারটি উপায়, বন্যা প্রতিরোধের উপায়, বাংলাদেশের বন্যার কারণ ও প্রতিকার, বন্যা প্রতিরোধের তিনটি উপায়, বন্যা কারণ ও ফলাফল,

বন্যা ও প্রতিকার

ভূমিকা : আমাদের বাংলাদেশ হচ্ছে নদীমাতৃক দেশ। আর ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। প্রায় প্রতিবছরই এদেশের মানুষ এই ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়। যার ফলে ক্ষতি সাধিত হওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্ত হচ্ছে জীবন সম্পদ ও পরিবেশ। বন্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও সময় মত  আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ও বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি জনসচেতনতা কাজে লাগালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লাঘব করা সম্ভব হবে। 

বন্যা কী : ‘বন্যা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘জলপ্লাবন’ অথবা ‘বান’। অনেক সময় উজানের ঢল এসে এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করে যে, তখন মাঠঘাটে খাল – বিল, নদী – নালা এমনকি বাড়ি ঘরে সব জায়গায় পানিতে নিমজ্জিত হয়। এমন অবস্থাকে বন্যা বলা হয়। 

বন্যার কারণ : ভাটির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এ দেশ থেকে সমুদ্র সমতল খুবই কাছে, তবে যেকোনো কারণে জলস্ফীতি ঘটলে নদীর পানি তখন বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যার ফলে সৃষ্টি হয় বন্যার। নদীতে যেসব কারণে জলস্ফীতি দেখা দিতে পারে তা হলো –

১| নদীতে পলি জমে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে ;
২| নদীর প্রধান প্রধান উৎসে বৃষ্টিপাত হলে ;
৩| হিমালয়ের হিমবাহে অধিক পরিমাণে তুষার গলন ;
৪| চর সৃষ্টি বা পলি সঞ্চয় যা নদীর গতিপথ পরিবর্তন ;
৫| কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি অপরিকল্পিত ব্রীজ যা স্বাভাবিক পানি প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায় ;
৬| সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় ; 

বাংলাদেশের বন্যা : বাংলাদেশে চিরপরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। দেশের স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৫৬, ১৯৭০ সাল গুলোতে মানুষ বড় ধরনের বন্যার শিকার হয়েছিল। আবার স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ২০০৪ ও ২০১৬ সালে খুব ভয়াবহ বন্যা হয়। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় ২০ কোটি মানুষ। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মানুষ ও অসংখ্য গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটেছিল।  

বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি : বন্যা যা বাংলাদেশের উন্নয়নের বাধাগ্রস্তের একটি মূল কারণ। বলতে গেলে এই বন্যা প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষতি করছে এদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। বাংলাদেশে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে এখনের সময় পর্যন্ত, যা সামগ্রিক আর্থিক  ক্ষতির পরিমাণ হয়েছিল ৬৩৬ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। 

সাম্প্রতিক বন্যা : ১৯৯৮ এবং ২০০৪ সাল হচ্ছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা। এই দুটি সালের মধ্যে ১৯৯৮ সাল ছিলো ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। যা দেশকে ভয়াবহ ক্ষতিতে পরিণত করেছিল। পাশাপাশি দেশের সম্পদ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব বয়ে আনে। এমনকি ২০০৪ সালের বন্যায় দেশের বিপুল সম্পদ নষ্ট হয়েছিল। এই বন্যায় মৃত লোকের সংখ্যা ছিল ৩৫০ জন, পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ছিল ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার ১২০ জন।   

বাংলাদেশের বন্যার কারণসমূহ : বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার কারণ দুটি ভাবে বিভক্ত করা যায়। 

১| প্রাকৃতিক কারণ
২| কৃত্রিম কারণ 

প্রাকৃতিক কারণ : বাংলাদেশের বন্যার প্রাকৃতিক কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো –

ক) জলবায়ু : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা সংগঠিত হতে থাকে।
খ) ভৌগলিক অবস্থা : মূলত এই বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানই বন্যার সবচেয়ে বড় কারণ সমূহ। অসংখ্য ছোট বড় নদী প্রবাহিত হয়েছে  এদেশের উপর দিয়ে, যার ফলে বর্ষাকালে এর প্রভাব  বৃদ্ধি পায় এবং নিম্নাঞ্চল গুলো সহজে প্লাবিত হয় এ কারণেই বন্যার সৃষ্টি হয়।
গ) অতিবৃষ্টি : বাংলাদেশ হচ্ছে বৃষ্টিভুক্ত অঞ্চল। যখন বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব দেখা দেয় তখনই অতি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এজন্যই বন্যা দেখা দেয়।
ঘ) উজানের ঢল : বাংলাদেশের বিভিন্ন পাহাড় পর্বত এবং অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। বর্ষাকালে যখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তখন পাহাড়ি ঢলে এদেশের নদ-নদী পানিতে নিমজ্জিত হয় যার ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
ঙ) হিমালয় বরফগলা পানি : বাংলাদেশের উত্তরে ভারতে অবস্থিত আছে পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বতমালা। যেখান থেকে আমাদের দেশে কয়েকটি নদী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উৎপত্তি। যার ফলে বরফ গলা পানি আমাদের দেশের নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় এ কারণেই বন্যার সৃষ্টি হয়। 

কৃত্রিম কারণ :

ক) ভারতের বাঁধ নির্মাণ : বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি হচ্ছে ভারতে। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করছে যার ফলে নদীর পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এগুলো বাদ নির্মাণের কারণে শুকনো মৌসুমগুলোতে যেমন পানি পাওয়া যায় না, তেমনি অপরদিকে এই বাঁধগুলোর স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় কারণে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়, এ কারণে মূলত বন্যা দেখা দেয়।
খ) বনাঞ্চল উজাড় : মূলত ২৫% বনভূমি একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে।  কিন্তু বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭ ভাগ। যার ফলে প্রতি বছর খরা হওয়ার পাশাপাশি অতিবৃষ্টিও দেখা দেয় এ কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়।
গ) নদী ভরাট : বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীগুলোই পলি জমে ভরাট হয়ে আছে। এ কারণে অল্প পরিমাণের বৃষ্টিতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেই বন্যা শুরু হয়। 

বন্যার সমস্যা সমাধানের উপায় : বন্যা সমস্যা সমাধানে দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
১| তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
২| দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ 

তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ :

ক) দুর্যোগ পূর্ব পর্যায় : বন্যার পূর্বে প্রশাসন এবং জনগণকে সজাগকরণ/সতর্কতা করতে হবে। বন্যা মোকাবেলায় জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
খ) দুর্যোগ কালীন পর্যায় : বন্যায় ভুক্তভোগী জনগণের সম্পদ রক্ষা এবং তাদেরকে উদ্ধার করার পাশাপাশি ত্রাণ প্রদান করা।
গ) দুর্যোগ পরবর্তী পর্যায়ে : বন্যার ফলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যেসব ক্ষতি হয় তা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ : বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর সাহায্যে বন্যা প্রতিরোধে দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন – পর্যাপ্ত পরিমাণে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা, বিপজ্জনক নদীর দুধারে বাঁধ নির্মাণ করা এবং নগররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা। বন্যা সমস্যা দূরীকরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন দেশগুলো মিলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সতর্ককরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। 

উপসংহার : প্রতিবছরই বন্যা দেশের প্রচুর পরিমাণে ক্ষয় – ক্ষতি সাধন করছে। সকলের জন্য বন্যা এক বিরাট অভিশাপ। আমাদের জাতীয় জীবনকে ধ্বংসে পরিণত করছে এই দুর্যোগ। এ দেশের জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। তাই অতি প্রয়োজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা।  তবেই আমাদের দেশ এই ভয়াবহ দুর্যোগ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আনন্দে মেতে উঠবে, দূর হবে দুঃখ, কষ্ট ও বেদনা। 

 

বন্যা ও প্রতিকার PDF Format

 

অন্যান্য রচনা
পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার
অধ্যবসায়
জীবন গঠন ও চরিত্র

Facebook
Pinterest
Reddit