অথবা, গাছ আমাদের বন্ধু
ভূমিকা : মানুষের জীবনে উদ্ভিদ অথবা গাছ অতি মূল্যবান। শুধু মানুষ নয় পৃথিবীর সমগ্র জীবকুলের জন্য গাছ অপরিহার্য। এমনকি এই গাছই সমস্ত জীবকূলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মানুষের নিঃস্বার্থ পরম বন্ধু হল গাছ। যখন বিজ্ঞানের কোন ভূমিকা ছিলনা, তখন মানুষ ছিল অসহায়। সেই আদিকাল থেকেই মানুষের একমাত্র বন্ধু ছিল গাছ। আমাদের জীবনধারণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাছ সাহায্য করে আসছে। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতে সর্বদাই গাছ আমাদের বন্ধু ছিল এবং থাকবে।
উপকারিতা : মানুষ সৃষ্টির আদিম লগ্নে বন-জঙ্গলের উদ্ভিদকূল ছিল মানুষের প্রধান আশ্রয়কেন্দ্র। তারপর মানুষ হয়েছে সভ্য, কিন্তু গাছ এখনো মানুষের প্রায় সকল খাদ্য জুগিয়ে চলেছে। প্রাচীনকালে গাছ-গাছড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হতো। বর্তমান যুগে এসেও এই গাছ-গাছড়া দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ। তাছাড়া গাছপালার সাহায্যে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। এমনকি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন দেয়। গাছের পাতা এবং ডাল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকমের আসবাবপত্র।
পরিবেশ রক্ষা : পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছ অপরিহার্য। কেননা, গাছ পরিবেশ থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং পরিবেশকে রাখে বিশুদ্ধ। উদ্ভিদকূল পরিবেশকে রাখে ঠান্ডা। বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
গাছের প্রয়োজনীয়তা : এক অফুরন্ত সৌন্দর্যের অধিকারী এ পৃথিবী। উদ্ভিদ কূল এই পৃথিবীকে সবুজ-শ্যামলে ভরিয়ে দিয়েছে। এমনকি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে গাছের অতুলনীয় অবদান রয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সকল মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশ পূরণ করে গাছ। এজন্য মানবজীবনে গাছের প্রয়োজনীয়তা অতি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গাছের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য গাছকে বলা হয় মানব জীবনের ছায়াস্বরূপ। গাছ আমাদের পরম বন্ধু, প্রতিনিয়ত যে কত উপকার করছে তা একটু ভেবে দেখলে অনুধাবন করা যায়।
বনসম্পদ ও বনসৃজন : সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে বনসৃজনের অতি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাণধারণের জন্য দরকার অক্সিজেন, আর পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন বন সংরক্ষণ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম।
বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব : পৃথিবীর মঙ্গলার্থে, সকল জীবকুলের মঙ্গলার্থে ও মানব সমাজের মঙ্গলার্থে বৃক্ষরোপনের অতি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ–
১. বৃক্ষ সমস্ত প্রাণীকুলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আর জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন ত্যাগ করে। যার ফলে সকল প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পারে।
২. বৃক্ষ প্রাণিজগতের খাদ্য জোগায়। এমনকি মানুষ ও পশুপাখি বৃক্ষের ফলমূল, লতা-পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।
৩. বিভিন্ন আসবাবপত্র যেমন – দরজা, , জানালা, খাট ,টেবিল ,চেয়ার ইত্যাদি তৈরিতে বৃক্ষ আমাদের কাঠ দেয়। তাছাড়া বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয় মধু ও মোম।
৪. গাছপালা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং মাটি ক্ষয় রোধ করে। এছাড়া পরিবেশকে রাখে ঠান্ডা এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
৫. গাছ আমাদের জীবন রক্ষার নানা ধরনের ঔষুধ দান করে।
প্রাচীনকাল থেকে গাছের অবদান : এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর থেকে গাছের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীন ভারতে বনভূমিতে গড়ে ওঠা আশ্রমিক শিক্ষার কথা আমরা সবাই জানি। প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্য এনেছে গাছপালা।
অরণ্য বন্দনা : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ভারতে বৃক্ষরোপনের উদ্দেশ্যে একটা উৎসবের সূচনা করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবছর আনন্দের সাথে পালিত হচ্ছে ‘বনসৃজন সপ্তাহ’।
উপসংহার : গাছ মানুষের পরম বন্ধু স্বরূপ। আমাদের সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন, যদি আমাদের একটি গাছ কাটতে হয় তাহলে দুইটি গাছ রোপন করতে হবে। সরকার নিয়মিত বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে জনগণকে সর্বদা গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ বানান করে আসছে।
একটি গাছ একটি প্রাণ PDF Format
অন্যান্য রচনা
বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা
কাগজ
প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য