বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ ও প্রতিকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ class 10, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ssc রচনা, Natural disasters in Bangladesh, Bangladesh natural disaster essay, Causes of natural disasters in Bangladesh, Types of natural disasters in Bangladesh, Bangladesh natural calamities, Bangladesh disaster management, Effects of natural disasters in Bangladesh, How Bangladesh deals with natural disasters, Bangladesh flood and cyclone history, Natural disaster paragraph for students,

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার 

ভূমিকা : প্রকৃতির দুই রূপ– সৃষ্টি ও ধ্বংস। একদিকে যেমন প্রকৃতি গড়ছে, তেমনি অপরদিকে ভাঙছে। একদিকে রক্ষক, অন্যদিকে ভক্ষক। প্রকৃতির ভালোবাসায় যে অঞ্চল থাকে, সেখানে তার স্নিগ্ধ শান্ত ও শ্যামল মূর্তি আমাদেরকে বিমোহিত করে। আবার এ প্রকৃতি যখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে, তখন সে ধ্বংসের খেলায় মাতে। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পৃথিবী : প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ বিভিন্নভাবে এ পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় পরিলক্ষিত হয়। যেমন ভূমিকম্প বেশি হয় আফগানিস্তান,, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে; দাবালন ছড়িয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়াতে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে জাপান, আমেরিকা, বাংলাদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে ; বন্যা হয় বাংলাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে; আবার তুষারঝড়ও হয় অনেক স্থানে। এসবই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশেও প্রকৃতি তার ভয়াল রূপ প্রদর্শন করে। বিশেষ করে বন্যা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ দেশটিতে এত বেশি আঘাত হানে তাই একে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র : বাংলাদেশ হলো মৌসুমী জলবায়ুর দেশ। এটি দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম। এদেশে প্রায় প্রতিবছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেখা মেলে। বাংলাদেশের  ভৌগলিক অবস্থানই হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের সঙ্গী। নিম্নে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র তুলে ধরা হলো। 

ক) বন্যা : প্রাচীনকাল থেকে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এদেশের মানুষ বন্যার শিকার হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে দেখা যায় যে, এদেশের বড় ধরনের বন্যাগুলো হয় ১৯১০, ১৯৩১, ১৯৫৪ ১৯৫৬ ১৯৬২ ১৯৬৬ ১৯৬৮ ১৯৬৯ ১৯৭০ ১৯৭৪ ১৯৮০ ১৯৮৪ ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালে। ১৯৮৮ এবং ১৯৮৯ সালের বন্যা ছিল সবথেকে ভয়াবহ। মূলত এ বন্যায় দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৫৩ টি জেলা প্লাবিত হয়েছিল। অপরদিকে ১৯৯৮ সালের বন্যা শতাব্দীর দীর্ঘস্থায়ী প্রলয়ংকরী বন্যা হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৯৫ দিন এ বন্যা স্থায়ী হয়। দেশের ৫৪ টি জেলা এ বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। 

খ) ঘূর্ণিঝড় : ঘূর্ণিঝড় এদেশের নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিবছরই এদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিম্নচাপ আঘাত হানে। তবে কোনো কোনো নিম্নচাপ প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেই পরিস্থিতি হয়ে পড়ে জটিল। ‘সাইক্লোন’ নামের এ ঝড়ে ব্যাপকভাবে দেশের দক্ষিণঅঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  ১৮৮৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বহুবার এ মহা দুর্যোগ আঘাত হেনেছে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭০ এবং ১৯৮১ সালের ঘূর্ণিঝড় ছিল ভয়াবহ। প্রায় এক লাখ লোকের মৃত্যু  হয় এই দুর্যোগে। এরপর ১৯৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলীয় অঞ্চলে। গত শতাব্দীর সর্বশেষ এবং ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১ সালের ২৫ এপ্রিল সংগঠিত হয়েছিল। এ ঝড়ের ব্যাপকতা ছিল স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বাধিক। এ ঝড়ে লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারায়। 

সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাস : সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক বছরই জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। বিগত ১৮৫ বছরে বাংলাদেশে ৫১ বার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস মূলত ঘূর্ণিঝড়ের সাথে হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার সময়, জোয়ার এসে প্লাবন ঘটায়। তবে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কটালের সময় যদি জলোচ্ছ্বাস হয়, তবে তার ফল খুবই মারাত্মক। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। এতে পাঁচ লাখের বেশি লোক মারা যায়। 

কালবৈশাখী : বাংলার মানুষ কালবৈশাখীর সাথে কম-বেশি পরিচিত। কালবৈশাখী সাধারণত গ্রীষ্মকালের বৈশাখ মাসে হয়ে থাকে। এতে বাংলার বহু এলাকা ধ্বংস পরিণত হয়। ঝড়ের তান্ডবে গাছপালা ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। মারা যায় হাজার হাজার মানুষ, গৃহপালিত জন্তু, পাখি ইত্যাদি। ১৯৮৯ সালে কালবৈশাখী সুন্দরবন এলাকা, ১৯৯১ সালে গাজীপুর ও ১৯৯৬ সালের টাঙ্গাইলের অনেক থানা বিধ্বস্ত করেছে। বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়েছে কালবৈশাখীর তান্ডবে। প্রায় প্রতিবছরই এই কালবৈশাখী আঘাত হানে। 

খরা : বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য দেখা দেয় খরা পরিস্থিতি। খরা একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খরা কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। খরার প্রভাবে শস্যাদি শুষ্ক হয়ে লাল বর্ণ ধারণ করে এবং গাছপালা শুকিয়ে যায়। মাটি ফেটে যায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যেতে থাকে। 

অতিবৃষ্টি : খরার উল্টো হলো অতিবৃষ্টি। অতিবৃষ্টিও কৃষিপ্রধান দেশের জন্য ক্ষতিকর। অতিবৃষ্টির কারণে মাঠ-ঘাট, জমি সব পানিতে ডুবে যায়, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিবৃষ্টি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম। 

নদীভাঙ্গন : নদীভাঙ্গন যা বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীভাঙ্গনের ফলে দেশের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে কমছে আমাদের ভূমির  পরিমাণ। নদী তীরের জনগণ সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামছে। 

ভূমিকম্প : ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশী প্রায় প্রতি বছরই ছোট ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে দালানকোঠা ধসে যাচ্ছে। জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয় এবং প্রাণহানি ঘটে। 

সিডর : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে সিডরের নাম মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে। কেননা ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের দিকে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। যার মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। সিডরের ভয়াবহতার রেশ আজও সুন্দরবন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। 

লবণাক্ততা : লবণাক্ততা হলো বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার জমিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ লবণাক্ত তার জন্য ফসল চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটি বর্তমানে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আওতাভুক্ত। 

এসিড বৃষ্টি : এসিড বৃষ্টি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দেখা না গেলেও একেবারে অপ্রতুল নয়। মূলত এসিড বৃষ্টি ঘটে গ্রীন হাউজ ইফেক্টের ফলে। শিল্প এলাকায় এসিড বৃষ্টি বেশি দেখা দেয়। এ বৃষ্টি জমির উর্বরতা নষ্ট করে ফেলে। বনাঞ্চল ধ্বংস করে ও দালানকোঠা বিনষ্ট করে। এটি ধীরে ধীরে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার উপায় : বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের ব্যাপক কাজ করতে হবে। কেননা এসব দুর্যোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা পারি শুধু এর থেকে নিজেদের রক্ষার উপায় অবলম্বন করতে। তাই আমাদের নিম্নোক্ত কার্যাবলী সম্পাদন জরুরী : 

১। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। কারণ নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলে আমাদের পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। আর পরিবেশের কারণে বন্যা-খরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
২। উপকূলীয় অঞ্চলে অধিক পরিমাণে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যাতে মানুষ দুর্যোগ কালীন সময়ে আশ্রয় নিতে পারে।
৩। আমাদের নদীগুলোতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। পলির কারণে অধিকাংশ নদীর পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
৪। অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে। ব্রিজ, কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণের সময় পানির প্রবাহ যেন ঠিক থাকে, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
৫। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
৬। সর্বোপরি সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত সহযোগিতার নিশ্চিত করতে হবে। 

উপসংহার : প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুষড়ে পড়ার কিছুই নেই। বরং সাহসের সাথে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। ভৌগলিক কারণেই আমাদের উপরিউক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা ভবিষ্যতেও করতে হবে এবং তা প্রতিরোধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

 বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার প্রতিকার রচনা PDF Format  

 

অন্যান্য রচনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা
আমি সুনাগরিক হতে চাই
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

Facebook
Pinterest
Reddit