ভূমিকা : কয়েক শতাব্দি যাবত বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশ ছিল পরাধীন। এই পরাধীনতার শুরু হয় ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। পরাধীনতার এই শিকল ভাঙার জন্য যুগে যুগে যেসব বীর নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তিতুমীর তাদের মধ্যে অন্যতম। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার প্রথম শহীদ হলেন বীর তিতুমীর।
জন্ম ও বংশ পরিচয় : তিতুমীর ১৭৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। শৈশবে তিনি এক কঠিন অসুখে ভুগেন। এই রোগ দূরীকরণের জন্য তাকে সেবন করতে হয় অতি মাত্রার তেতো এক ওষুধ। সেখান থেকে তার ডাকনাম হলো, তেতো। আবার তেতো থেকে তিতু। তার সাথে যুক্ত হলো মীর, তারপর থেকে তার নাম হলো তিতুমীর। কিন্তু তার প্রকৃত নাম হচ্ছে সৈয়দ মীর নিসার আলী।
বাঁশের কেল্লা নির্মাণ : তিতুমীর তার দেশকে ইংরেজদের দুঃশাসনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তার গ্রাম ছেড়ে চলে আসে বারাসাতের নারকেল বাড়িয়ায়। তিতুমীরকে সাদরে গ্রহণ করে এখানকার লোকজন। তারপর তিনি হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিয়ে এক দুভেদ্য বাঁশের দুর্গ নির্মাণ করলেন। মূলত এখানে তিনি হাজার হাজার সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিতেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে।
তিতুমীরের সংগ্রাম ও মৃত্যু : তিতুমীরকে দমন করার উদ্দেশ্যে ১৮৩০ সালে ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয়। কিন্তু আলেকজান্ডার এবং তার সিপাহী বাহিনী পরাস্ত হয় তিতুমীর হাতে। তারপর তিনি দখল করে নেন কয়েকটি নীলকুঠি। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর তখন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিস্ক ছিলেন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল। তিনি তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য সেনাবহর আর গোলন্দাজ বাহিনী পাঠালেন। তারা আক্রমণ করলেন তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। তখন ছিল ভোরের আবছা আলো। তাদের কাছে ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য ও অজস্র গোলা বারুদ। অন্যদিকে তিতুমীর কাছে ছিল মাত্র কয়েক হাজার স্বাধীনতা প্রিয় সৈনিক। তার কাছে ছিল না কোনো কামান, ছিল না কোনো গুলি। তবে তাদের কাছে পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার অমিত তেজ ছিল। তারপর শুরু হল প্রচন্ড যুদ্ধ। তিতুমীর এবং তার সৈনিকরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ইংরেজদের সৈনিকদের গুলির আঘাতে ছারখার হলো তিতুমীর নারকেল বাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর এবং তার সৈনিকগণ। ইংরেজরা বন্দি করল তিতুমীর ২৫০ জন সৈনিকে। কারো হলো ফাঁসি, আবার কাউকে করা হলো কারাবন্দি এভাবেই শেষ হলো যুদ্ধ।
উপসংহার : তিতুমীর শহীদ হন নির্ভীক বীরের মতো যুদ্ধ করে। এ যুদ্ধে এদেশের মানুষের মনে বীর তিতুমীর অমর হয়ে রইলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার প্রথম শহীদ হলেন বীর তিতুমীর। তাই তিতুমীর আমাদের সকলের কাছে চিরস্মরণীয়।
অন্যান্য রচনা
বাংলাদেশের কৃষক
ডেঙ্গুজ্বর
খাদ্য ভেজাল ও মুনাফালোভীদের দৌরাত্ম্য