অথবা সময়ানুবর্তিতা,
অথবা সময়ের সদ্ব্যবহার
ভূমিকা : মাত্র তিনটি অক্ষর মিলিয়ে গঠিত হয়েছে একটি শব্দ ‘সময়’ যার ইংরেজি হলো Time। এর অর্থ হল ব্যাপৃতি ( duration), সংগঠন কাল (organization period) প্রভৃতি। সময়ের অতি গুরুত্ব রয়েছে জীবন, জগৎ ও সংসারে। সময়ের যাত্রা শুরু হয়েছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে তা এখনো চলছে, আর চলবে। সময়ই হলো মানব জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি। আবার এই সময়ই মানবজীবনে বয়ে আনে অবনতির অমানিশা। মানব জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য সময়ের গুরুত্ব একান্ত প্রয়োজন। এই সাফল্য অর্জনই হচ্ছে সময়ের মূল্যের সাক্ষী। অথচ আমরা সময়ের মূল্য দিতে চাই না। যার ফলে সফলতার পথ ক্রমশই হালকা হতে থাকে। প্রবাদ আছে – “Time and tide wait for none.” অর্থাৎ সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই আমাদের সকলের উচিত সময় অপচয় থেকে বিরত থাকা এবং সময়কে যথাযথ মূল্য দিয়ে জীবন প্রতিষ্ঠা ও সাফল্য অর্জন করা।
সময় কী : সময় হচ্ছে এক অমূল্য সম্পদ। জীবন জগৎ এবং সংসারের মূল্য নিরূপণ করা সম্ভব হলেও কিন্তু সময়ের মূল্য নিরূপণ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। ‘সময়’ যার এক মুহূর্তে থেমে থাকার কোন অবকাশ নেই। তার যাত্রা শুরু হয়েছে সেই আদিকাল থেকে। আর এই অবিরাম যাত্রার নামই হচ্ছে সময়।
সময়ের মূল্য : পৃথিবীতে মানুষ যা কিছু করুক না কেন তার আগে প্রয়োজন সময়ের। স্রষ্টা সময় দিয়েই এই পৃথিবীতে মানুষকে অবতরণ করেছেন। তিনি প্রতিটি কর্মের জন্য দিয়েছেন সময়। অথচ সময়কে আমরা মূল্য দেই না। মানুষ যদি তার ধনসম্পদ, মান সম্মান হারিয়ে ফেলে তাহলে তা চাইলেই আবার ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু সময় একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। অতীতে ফেলে আসা দিনগুলো চাইলেও আর কোটি টাকার মূল্যে ফেরত পাওয়া যাবে না। জীবনের পূর্ণতা কিন্তু লুকিয়ে আছে এই অল্প সময়ের মধ্যে তা আমরা কেউই বুঝতে চায় না। তাই সকলের জন্য সময়ের মূল্য দেওয়াটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবেই আগামীর দিনগুলো আশায় ভরে উঠবে।
সময়ের সদ্ব্যবহার : সংক্ষিপ্ত জীবন হচ্ছে মানব জীবন। তার প্রতিটি পর্যায়ে সদ্ব্যবহার প্রয়োজন রয়েছে। একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত মানুষ কিন্তু বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলে পৃথিবীর বুকে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে যাওয়াই হচ্ছে সার্থকতা। মানব জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই অতি মূল্যবান। সময়কে যদি আমরা ঠিকমতো কাজে না লাগায় তাহলে মানব জীবনে কখনোই উন্নতি সাধন করা সম্ভব হবে না। পৃথিবীতে যত গুণী জ্ঞানী ব্যক্তি রয়েছে তাদের জীবন বৃত্তান্ত যদি আমরা একটু লক্ষ্য করি তাহলে বোঝা যাবে তারা তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সময়ের সদ্ব্যবহার করেছে এবং জীবনকে সার্থকতাই পরিণত করেছে।
সময়ের মূল্যবোধের অর্থ : জীবনে সাফল্য কিংবা সার্থকতা অর্জনের মূলমন্ত্র হচ্ছে সময়ের সঠিক ব্যবহার। সময়ের মূল্যবোধের অর্থ হচ্ছে সময়ের কাজ সময় মতো করা। যে ব্যক্তি সময়ের কাজ সময় মতো সম্পাদন করে না পরবর্তীতে সেই একমাত্র উপলব্ধি করতে পারে সময়ের মর্যাদা। যার ফলে সে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারেনা। তাই সময়কে সময়মতো কাজে লাগিয়ে মানব জীবনে সকলের সফলতা অর্জন করাই একমাত্র কাম্য হওয়া উচিৎ।
ছাত্র জীবনে সময়ের মূল্য : সময়কে মূল্য দেওয়ার উপযুক্ত সময় হলো ছাত্র জীবন। ছাত্র জীবনেই ভবিষ্যৎ সফল জীবন গড়ে ওঠে। এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে ছাত্র জীবন। সময়ের মূল্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উপলব্ধি করা যায় একমাত্র ছাত্রজীবনে। যারা ছাত্র জীবনে অধিক পরিশ্রমী হয় এবং ভালো ফলাফল অর্জনের পাশাপাশি সময়ের সদ্ব্যবহার করে একমাত্র তারাই ভবিষ্যতের সফলতা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে যারা সময়ের মূল্য দিতে জানে না, সময়কে অপব্যবহার করে, এমনকি যারা অলস, একমাত্র তারাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থতার শিকার হয়। তাই ছাত্র জীবনে সময়ের গুরুত্ব অতি প্রয়োজনীয়।
সময় অপব্যবহারের কুফল : যে সকল ব্যক্তিরা সময়কে অবহেলা করে এবং সঠিকনিয়মে সময়কে কাজে লাগায় না একমাত্র তাদের জীবনে নেমে আসে দুঃখ, কষ্ট ও কালো ছায়া। শত শত ব্যক্তি সময়কে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বলে তারা ব্যর্থতা অর্জন করেছে। তাই সময়ের অপব্যবহার খুবই ভয়ংকর। এজন্য সময়কে অবহেলা করা সঠিক নয়।
সময় বহমান : নদীর স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না তেমনি সময়ও কারো জন্য থেমে থাকে না। সময় হচ্ছে অবিরাম ছুটে চলা এক গতির মত, কারো পানে ফিরে তাকায় না।
সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করার সুফল : জীবনের সার্থকতা এবং জীবনকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার। জীবনের লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হয় সময়কে সময় মতো কাজে লাগানোর মাধ্যমে।
সময় ব্যবহারে অবক্ষয় ও বিনোদনের ভূমিকা : অনেকে আছে অবসর গ্রহণের সময়কে মনে করে সময়ের অপচয়। যা মূর্খতার পরিচয়। কারণ প্রতিটি ব্যক্তির কাজ করার পাশাপাশি প্রয়োজন রয়েছে অবসর এবং বিনোদনের। যা তার কাজে নতুন নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়। তাই অবসর সময়কে সময়ের অপচয় মনে করা উচিৎ নয়।
সময়ের সফল ব্যক্তি ও জাতির উদাহরণ : সময়ের মূল্য সম্পর্কে যারা উদাসীন ছিলেন না তারা হলেন বিখ্যাত গুণী, জ্ঞানী ব্যক্তিরা। এমনকি অলসতা ও জড়তা তাদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনি। তারা তাদের অলসতা ও জড়তাকে উপেক্ষা করে জীবনকে পৌঁছে নিয়েছে সাফল্যের পথে। যেমন – আব্রাহাম লিংকন ছিলেন একজন শ্রমিক, পরবর্তীতে হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে এরিস্টটল ছিলেন একজন গৃহশিক্ষক পরবর্তীতে হয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক।
ব্যক্তিজীবন গঠনে সময়ের প্রভাব : যদি কোন ব্যক্তি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারে, তবেই সে সফল জীবন গঠন করতে পারবে।
সঠিক সময়ে সঠিক কার্য সম্পন্ন করা : সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় সময়ের কাজ সময়ে সম্পূর্ণ করলে এমনকি সঠিক সময়ে সঠিক কার্য সম্পূর্ণ করলে জীবনে আনে গতিময়তা।
সময় সম্পর্কে আমার উপলব্ধি : আমি মনে করি, প্রতিটি ব্যক্তির সময় সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। সময়ের ব্যবহার যদি সঠিক হয় তাহলে মানব জীবনের প্রত্যেকটি দিক সঠিকভাবে গঠন হবে।
সময়ের অবহেলার পরিণাম : প্রত্যেকটি ব্যক্তির জীবনে সময়ের মূল্য অত্যধিক। সময়ের সদ্বব্যবহারই পারে জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করতে। তাই এই ছোট জীবনের মূল্যবান সময়কে অবহেলা করা উচিত নয়।
উপসংহার : মানব জীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম। সময়কে অবহেলা না করে আমাদের সকলের উচিত যথাযথভাবে সময়কে কাজে লাগানো। আমরা যদি সময়ের অপচয় করি তাহলে তা গোটা জাতির জন্য ক্ষতিকর। এমনকি সময়ের সঠিক মূল্য না দিলে কোন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের সকলের উচিত সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
অন্যান্য রচনা
অধ্যবসায়
জীবন গঠন ও চরিত্র
বন্যা ও প্রতিকার