অথবা সভ্যতার বিকাশে শ্রমের অবদান
অথবা জাতীয় উন্নয়নে শ্রমের গুরুত্ব
ভূমিকা : বর্তমান পৃথিবীর প্রধান সংগ্রামের হাতিয়ার হচ্ছে শ্রম। এই মানব সভ্যতার মূলে রয়েছে যুগ যুগান্তের কোটি কোটি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। মানুষ তার শ্রম দিয়েই বর্তমান যুগকে আধুনিকতাই পরিণত করেছে। বেঁচে থাকার জন্য সকল মানুষকে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় এবং এই যুদ্ধের মূল কারণ হচ্ছে পরিশ্রম। সভ্যতার আদি থেকে এই যুগ পর্যন্ত মানুষের প্রতিনিয়ত পরিশ্রমের ফলে জীবনযুদ্ধে জয়ী হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তিই জানে পরিশ্রমে হচ্ছে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
পৃথিবীতে শ্রমের মর্যাদা : সভ্যতার প্রতিটি স্থানে অবদান রয়েছে শ্রমের। শ্রম ছাড়া সাফল্য অর্জন কখনোই উপলব্ধি করা যায় না। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ চাষাবাদের কাজ শুরু করেছে। এমনকি তারা বিভিন্ন কায়িক এবং মানসিক শ্রমের মাধ্যমে চালানো শিখেছে তীর ও নৌকা, আরো শিখেছে কিভাবে পশু শিকার করে মাংস সংগ্রহ করা যায়। সভ্যতার আদি যুগ মানসিক ও কায়িক শ্রমের মাধ্যমে সভ্যতাকে পরিবর্তনে ঘটিয়েছে।
প্রকারভেদ : শ্রম হচ্ছে দুই প্রকার। কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। উভয় প্রকার শ্রমে সাফল্য বয়ে আনে। জগতে সুখ শান্তি মান সম্মান প্রতিপত্তি উপলব্ধি করা যায় পরিশ্রমের মাধ্যমে। চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, বৈজ্ঞানিক, অর্থনীতিবিদ এইসব ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধের মূলে রয়েছে এই পরিশ্রম। সমাজে কুলি – মজুর শ্রমিক এমনকি সাধারণ জনগণ রুটিনমাফিক নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে তাদের শ্রমে। এটা বলা যেতে পারে যে কায়িক শ্রম অবহেলার নয়। অর্থ ও সামাজিক মর্যাদা তাদের কম হলেও সভ্যতার মূল ভিত্তি গড়ে তুলেছে তাদের ঘামে।
শ্রমের গুরুত্ব : Man is the architect of his own fortune. অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নির্মাতা। শ্রমের মাধ্যমেই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয়। সৌভাগ্যের মূলে রয়েছে শ্রমের অধিক অবদান। প্রতিকূলে টিকে থাকার জন্য মানব জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বলা যায় পৃথিবী হচ্ছে কর্মশালা আর জীবন মানেই পরিশ্রম। অসাধারণ সাফল্য অর্জনের মূল কারণ হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম। এজন্য প্রবাদ আছে যে –
“পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি”
আমাদের দেশে শ্রম সম্পর্কে ধারণা : আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই এটাই ধারণা করে যে নিজে কাজ করলে আত্মসম্মানের হানি ঘটবে। কিন্তু এই ধারণা আমাদের সমাজের যে কি পরিমান ক্ষতি বয়ে আনে তা বোঝানো অসম্ভব। কায়িক শ্রম মোটেই আত্মসম্মানের হানি ঘটায় না বরং উল্টে আরো সমাজে প্রতিষ্ঠাতা লাভের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কায়িক শ্রমকে হীন ভেবে সে কাজে কেউই নিয়োজিত হতে চায় না,কিন্তু আমাদের দেশে সকলেই চাকরি করতে উৎসাহী, তারা মনে করে কলি – মজুর, শ্রমিক, চাষী সকলেই ছোট লোক। অথচ দেশ ও জাতির মহান রক্ষক ও দায়িত্ব, কঠোর পরিশ্রম করছে এরাই। কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম প্রয়োজন অনুযায়ী দুটোরই অতি গুরুত্ব রয়েছে।
উন্নত দেশসমূহে শ্রমের মর্যাদা : পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শ্রমের প্রতি তাদের বেশি গুরুত্ব রয়েছে। যেমন বলি – আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মান, ব্রিটেন, জাপান উন্নতির মূল চাবিকাঠি হচ্ছে তাদের পরিশ্রম। উন্নত দেশগুলোতে কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম মধ্যে কোন পার্থক্য রাখে না। কোন শ্রমকেই তারা আত্মসম্মানের হানি কমবে তা মনে করে না। তাদের অধিক শ্রমের মূলে রয়েছে স্বর্ণশিখরের আহরণ। আমরা এটা সবাই জানি যে জাতি যত পরিশ্রমি সে জাতি তত উন্নতি। উন্নত দেশ কাজকে কাজ বলেই মনে করে। অন্যদিকে আমাদের দেশ সম্পূর্ণ উল্টো।
শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ : পৃথিবীতে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যাবে তাদের এই সাফল্য অর্জনের পিছনে রয়েছে অধিক পরিশ্রম। ইসলাম ধর্মে উল্লেখ আছে হযরত মোহাম্মদ (স) কঠোর পরিশ্রমের অধিকারী ছিলেন। তিনি মাটি কাটা শ্রমিকদের সাথে মিলে মাটি কেটে গেছেন,সে এই কাজে লজ্জা পাওয়া তো দূরের কথা এমনকি কখনো মনে করেনি তার আত্মসম্মানের হানি ঘটবে। তিনি বলেছিলেন নিজের কাজ নিচে করলে সে কাজে পবিত্রতা ফুটে ওঠে।
উপসংহার : শ্রমেই মানুষের জীবনের কাব্য, এমনকি জীবন ও সভ্যতার মূল কারণ হচ্ছে শ্রমের ফসল। শ্রম-শক্তি পারে মানুষের জীবনে সাফল্য এবং সুখ-শান্তি এনে দিতে। আমাদের সকলের উচিত শ্রমকে মর্যাদা হানিকর মনে না করে অতি পরিশ্রমী হওয়া। প্রতিটি মানুষকে মনে রাখতে হবে যে একমাত্র শ্রম সাধনার মাধ্যমে নিজ ভাগ্যকে গড়ে তুলতে পারবে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার